Tuesday, January 3, 2017

 কয়েকটা খুন এবং একটি গল্প
.
লিখাঃ Shakhawat Hossain Rishat
.
২৬ নাম্বার হিকোরি রোড। রোডের চারপাশে কিছু অন্ধকার এলোমেলো গলি। তেমনই একটি গলির সামনে কিছু উৎসুক জনতার ভীর। ভীর থেকে একটু দূরে একটা লাশ পড়ে আছে উপুড় হয়ে।।লাশটার ধড় থেকে মাথাটা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে নিয়ে গেছে কেউ একজন।খুবই ভয়ংকর দৃশ্য।গা শিরশির করে উঠে। দেখামাত্রই মনে হয় স্টার্নাম বরাবর একটা শিরশিরে শীতল হাওয়া বয়ে গেছে। তার উপর আবার বিধঘূটে পঁচা গন্ধ। যেন নাড়িভূড়ি উল্টে বেড়িয়ে আসবে এখুনি।
.
CIA হেডকোয়ার্টার।এজেন্সি থেকে আর্জেন্ট মিটিং কল করা হয়েছে।
একটা টেবিলের মাঝ বরাবর বসে আছেন উইলিয়াম শেপার্ড।বয়স আনুমানিক ৪৫ । বড়জোড় টেনেটুনে ৫০।প্রচন্ড খিটখিটে মেজাজের মানুষ। আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থা CIA এর একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা তিনি।চিপ ইন কমান্ডার। আর তার আশেপাশে বসে আছে আরো কয়েকজন অফিসার।প্রায় সবাই CIA এর হাইলি ডেকোরেটেড অফিসার। তার মধ্যে একজনের কথা আলাদাভাবে বলতে হবে। নাম কলিন চ্যাপম্যান। বয়সে তরুন। কিন্তু কাজেকর্মে দূর্দান্ত। অল্প সময়েই এজেন্সিতে নাম কামিয়েছে প্রচুর।
এদিকে সবারই কপাল খানিকটা কুঁচকানো। বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে। বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট।
.
উইলিয়াম শেফার্ড যথাসম্ভব ভারী গলায় বললেন-
-- ডিয়ার ফ্রেন্ডস, আপনাদেরকে কেন ডাকা হয়েছে এই ব্যাপারে আশা করি আপনারা সবাই মোটামুটি অবগত আছেন। আসলে সমস্যা খুবই গুরুতর। আমাদের স্টেটে শেষ কয়েকদিন ধরে চলছে কিছু এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং। আজ নিয়ে মোট পাঁচটা মার্ডার হলো।আর সবগুলো মার্ডারের ধরনই হলো প্রায় একই।তবে হত্যাকারী কোন ক্লু ছেড়ে যায় নি।প্রথমেই এ বিষয়ে আপনাদের মতামত জানতে চাই। মি. কলিন, তুমি বিষয়টাকে কিভাবে ব্যাখ্যা করবে?
--কমান্ডার, পাঁচটা মার্ডারই পূর্ব পরিকল্পিত এবং মার্ডারের ধরন একই। লাশগুলোকে এমন জায়গায় ফেলে রাখে যাওয়া হয়েছে যেই পয়েন্টগুলোতে কোন সিসি ক্যামেরা নেই। আর ধারালো কমান্ডো নাইফ ব্যাবহার করা হয়েছে মাথাগুলোকে আলাদা করতে।
--কে করতে পারে এই কাজ?তোমার কি মনে হয়?
-- খুব সম্ভবত কোন সিরিয়াল কিলার কিংবা টেররিষ্ট ইউনিট। কারন সবগুলো মার্ডারের ধরন একই।
--হুম হতে পারে। তবে একটা ব্যাপার মোটামুটি ধারনা করা যায় যে এটা শুধুমাত্র একজন মানুষের কাজ নয়। কারন ২৭ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ৩ টা মাথাকাটা লাশ পাওয়া যায় তাও ভিন্ন ভিন্ন জায়গায়। একজন মানুষের পক্ষে একই দিন ৩ টা মার্ডার করে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় লাশ ফেলে যাওয়া সম্ভব নয়। তারা দলবদ্ধভাবে এই মার্ডারগুলো করছে।
বাট হু দ্য হেল ইজ দিস পিপল?
--খুব তাড়াতড়িই আমাদের এর একটা বিহিত করতে হবে কমান্ডার।স্টেটের জনগনের মধ্যে আতঙ্ক বেড়েই চলেছে।
--আপনারা সবাই যে যার মত করে স্টাডি করুন কেইসটা। আর প্রাথমিকভাবে ইনভেস্টিগেশন চালিয়ে যান।আর কোন দূর্ঘটনা যাতে না ঘটে।
--ওকে স্যার।
.
আজ সকাল সকাল অফিসে চলে আসলেন কমান্ডার  উইলিয়াম শেফার্ড। টেবিলের উপর রাখা কফির মগটা থেকে এখনও ধোঁয়া উঠছে। কম্পিউটারের স্ক্রীনে চোখ পড়তেই তার সাদা চামড়ার চেহারাটা ফ্যাকাশে হয়ে গেল । একটা মেইল আসছে কলিন চপম্যানের কাছ থেকে।
তড়িঘড়ি করে কলিনকে কল করলেন তিনি। একবার রিং বাজতেই ওপাশ থেকে গলার আওয়াজ ভেসে আসলো। তিনিও হয়তো কলটার জন্যই অপেক্ষা করছিলেন।
--আবার? (শেফার্ড)
--হুম। এবার একজন নবজাতকের লাশ পাওয়া গেছে।খুনের ধরন একই।মাথাকাটা। ( কলিন)
-- কিন্তু এভাবে তো আর চলতে দেওয়া যায় না।
--হুম স্যার। যা করার খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে।
--তুমি এখুনি আমার অফিসে আস।
--ওকে স্যার। আই উইল বি দেয়ার ইন টেন মিনিটস্।
-- হুম। আর আসার আগে থানায় কয়েকদিনের মধ্যে কোন নবজাতকের মিসিং রিপোর্ট আসছে কিনা সেটা চেক করে এসো।
--জ্বি স্যার।
.
কিছুক্ষন পরই কলিন চ্যাপম্যান অনেকটা হুড়মুড় করে অফিসে এসে ঢুকলেন।এসেই গলায় উৎকন্ঠা জড়িয়ে বললেন-
--কমান্ডার, আপনার ধারনাই ঠিক। দুই দিন আগে একটা মিসিং রিপোর্ট আসে। সেন্ট্রাল হসপিটাল থেকে ২ দিনের একটা বাচ্চা হারিয়ে যায়।
--তাহলে মার্ডার হওয়া বাচ্চাটা কি উনাদেরই? যোগাযোগ করেছিলে ঐ পরিবারে সাথে?
--জ্বি স্যার। বাচ্চা উনাদেরই।
--কিভাবে সিওর হলে? ভিকটিমের তো গলাকাটা ছিল।
--বাচ্চাটার শরীরে একটা জন্মদাগ ছিল। তার পরিবার ওটা দেখেই শনাক্ত করে। বাচ্চা ওনাদেরই।
-- একটা দুই দিনের বাচ্চাকেও ছাড়লো না ওই পাষন্ড। কি চায় ওরা? কে আছে এই হত্যাকান্ডের পিছনে? কি ওদের মোটিভ? (চিৎকার করে)
--এছাড়া আরও বাকি যে পাঁচজন খুন হয়েছিল তাদের নামেও মিসিং রিপোর্ট ছিল বিভিন্ন থানায়।
-- কিছু তো একটা ব্যাপার আছে। পাঁচটা খুনেই ভিকটিম এর মাথা কাটা।
তারমানে খুনগুলো এমনিতেই হচ্ছে না। খুন করে খুনী এদের 'মাথা' কেটে রেখে দিচ্ছে। কিংবা অন্য কোথাও ফেলে দিচ্ছে। কিন্তু এটা কেন করছে?
--কমান্ডার, একটা ব্যাপার লক্ষ করেছেন কি?
--কি?
--এই পাঁচটা খুনের মাঝেই কিন্তু একটা প্যাটার্ণ আছে।
--কেমন?
--দেখুন, প্রথমে পাওয়া যায় একজন বৃদ্ধের লাশ। বয়স ৭০ এর কাছাকাছি। এরপর পাওয়া যায় একজন মধ্যবয়ষ্ক মানুষের। বয়স ৩৫-৪০। এরপর যে খুন হয় সে বয়সে নিতান্তই যুবক। বয়স হয়তো ২০-২১ বছর হবে। এরপর সদ্য জন্ম নেওয়া একজন নবজাতকের। আর বাকি দুইটা লাশ একজন বৃদ্ধা মহিলা এবং একজন মধ্যবয়স্ক নারীর।
এই সবগুলো খুনের মধ্যে কোথাও একটা মিল আছে।
--হুম। তার মানে তুমি বলতে চাইছো খুনীর টার্গেট এখন একজন যুবতী মেয়ে? যার বয়স হবে ২০-২১ বছর?
--হুম। স্যার। সেই সম্ভবনাটাই তো সবচেয়ে জোরালো।
--২০-২১ বছরের ওই ছেলেটা কোথা থেকে মিসিং?
-- তার পরিবারের ভাষ্যমতে, কলেজ থেকে।
-- স্টেটের সবকটা কলেজে সিভিল ড্রেসে আমাদের লোক নামিয়ে দাও। খুনী হয়তো কোন কলেজ থেকেই মেয়েটাকে তুলবে।
--ওকে কমান্ডার।
-- আর সেন্ট্রাল হসপিটালের সিসি ক্যামেরা চেক করো। বাচ্চাটাতো আর এভাবে গায়েব হয়ে যায় নি। এর পিছনে কেউ তো আছে।
-- ওকে আমি দেখছি কমান্ডার।
.
দুপুর। লাঞ্চ শেষ করে একটা বইয়ে মুখ গুজে দিয়ে আছেন কমান্ডার। ফ্রেডরিক ফরসাইথ এর অনবদ্য থ্রিলার ' দ্য ডে অব দ্য জ্যাকেল' পড়ছিলেন। ইন্টারন্যাশ্যানাল বেষ্ট সেলিং থ্রিলার। ক্লাইমেক্স এ যখন আসলেন তখনই বেরসিকের মত ভিতরে ঢুকলেন ইনভেস্টিগেটর অফিসার মি. নাইজেল। ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকালেন কমান্ডার।অনেকটা কর্কশ গলায় মি. নাইজেল বললেন-
-- দুই জন কিডনাপার ধরা পড়েছে।
--কোথা থেকে? (কমান্ডার)
-- প্রিন্সটন ইউনির্ভাসিটি থেকে। একটা মেয়েকে ট্র্যাপ করার সময় ধরা পড়েছে।
--টার্গেটের কোন ক্ষতি হয় নি তো?
--নো স্যার। মেয়েটা ভালো আছে।
--কিডন্যাপারদের ইন্টেরোগেট করেছেন?
--জ্বি স্যার। ওরা ভাড়াটে লোক। টাকার বিনিময়ে কাজ করে। যে অপারেশনটা লিড করছে তার সাথে এদের সরাসরি কোন সম্পর্ক নেই।
--তাহলে 'টার্গেট' কে ওর কাছে পৌছে দেয় কিভাবে।
--ওদের কে একটা সাদা কাগজ দেওয়া হয়েছে। কথা ছিল কিডন্যাপের পর বাকি ইন্সট্রাকশান ওদের দেওয়া হবে সময়মতো।
--সাদা কাগজ?? কোন কিছু লিখা ছিলো না?
--নো স্যার।
--কাগজটা ল্যাবে পাঠিয়ে দিন। হতে পারে ওখান থেকে কোন ক্লু পাওয়া যাবে।
--ওকে স্যার।
আরেকটা নিউজ, সেন্ট্রাল হসপিটাল থেকে যে বাচ্চাটা চুরি করে সে ও ধরা পড়েছে।
--তাই নাকি? ভাল সংবাদ।
--জ্বি স্যার। ও একজন ক্ল্যাপটোম্যানিয়াক। আগেও ওর নামে থানায় ডায়েরী করা ছিল। সাধারনত ছোটখাটো চুরি সাথে যুক্ত থাকে।
--কোন তথ্য পেয়েছেন ওর কাছ থেকে?
--তেমন কিছু নয়। তার কাছ থেকেও একটা সাদা কাগজ পাওয়া গেছে।
--ওকে আপনি দুইটা কাগজই ল্যাবে পাঠিয়ে দিন।
সন্ধ্যার মধ্যেই আমি রিপোর্ট চাই।
--হয়ে যাবে স্যার।
.
সন্ধ্যা ৭:২৭।
CIA হেডকোয়ার্টার।
দায়িত্বপ্রাপ্ত সব অফিসারকে ডেকে পাঠালেন কমান্ডার। ল্যাব রিপোর্টে কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।সে ব্যাপারে কথা বলার জন্যই জরুরি তলব।
কিছুক্ষন পর নিরবতা ভেঙে এজেন্সির চীপ ক্যামিষ্ট 'উইলিয়াম শার্প' তার ভারী আওয়াজে কথা বলা শুরু করলেন।
--জ্যান্টালম্যান, আমরা খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু উদ্ধার করতে পেরেছি। যে সাদা কাগজগুলো আমরা উদ্ধার করেছিলাম এগুলো মূলত ইনভিজিবল ইন্ক দিয়ে লিখা। এজন্য খালিচোখে এগুলোকে আমাদের নিতান্তই সাদা কাগজ বলে মনে হয়েছে।
১ম কাগজটাতে ব্যবহার করা হয়েছে 'ফেনলথ্যালিন'। এই রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে লিখার কিছু সময় পর তা অদৃশ্য হয়ে যায়। কিন্তু যখন একে আবার সোডিয়াম কার্বনেটের সংস্পর্শে আনা হয় তা গোলাপী বর্ণে ফুটে উঠে। সাদা কাগজটাতে কোড ল্যাংগুয়েজে একটা লিখা ছিল। সেটাকে ডিকোড করে একটা একটা ঠিকানা পাওয়া যায়। সম্ভবত কিডন্যাপাররা ' টার্গেট' কে সেই ঠিকানায় পৌছে দেওয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ ছিলো।
আর ২য় কাগজটাতে অর্থাৎ যেটা ক্ল্যাপটোম্যানিয়াক এর কাছ থেকে পাওযা যায় সেটাতে খুবই পুরাতন কিন্তু কার্যকরী একটা ট্রিক্স ইউজ করা হয়। সাধারন লেবুর রস দিয়ে লিখা হয়েছিল সেখানে। ফলে ঐ কাগজে তাপ দেওয়ার সাথে সাথে কার্বন পুড়ে বাদামি বর্ণের লিখা ফুটে উঠে। সেখানেও একই ঠিকানা পাওয়া যায়।
-- আর অন্য কোন তথ্য কি পেয়েছেন?( কমান্ডার)
-- ফিঙ্গার ফ্রিন্ট পাওয়া যায় কিছু। সেখানে দুইটা ফিঙ্গার ফ্রিন্ট হলো একজন কিডন্যাপার আর আরেকটা ঐ যে বাচ্চা চুরি করেছে তার। তবে দুইটা কাগজেই একই ধরনের দুইটা ফিঙ্গারপ্রিন্ট পাওয়া যায়। ওগুলো সম্ভবত মূল হোতার। অর্থাৎ যে মিশনটা চালাচ্ছে তার।
-- আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
.
একটা ফোর্স নিয়ে কমান্ডার শেপার্ড, কলিন চ্যাপম্যানরা গজরাতে গজরাতে রওনা দেয় ওই ঠিকানায়।আজ যে এর একটা বিহিত করতেই হবে। সাথে করে নিয়ে যায় অত্যাধুনিক সব অস্ত্র।হ্যাকলার এন্ড কচ HK416, F-2000 এ্যাসল্ট রাইফেল, AK-47, কিংবা অত্যাধুনিক স্নাইপার রাইফেল AS50 সবই।
এরই মধ্যে সব প্ল্যান করে নেয় তারা। দুইটা সাব ইউনিটে আক্রমনে যাবে তারা। তার মধ্যে 'সাব ইউনিট-B' ব্যাকাপ হিসেবে থাকবে। স্নাইপার রাইফেলে টারগেটকে এনগেজ' করে রাখবে। অর্ডার পাওয়া মাত্রই শ্যুট করবে। আর 'সাব ইউনিট -A' ফিল্ড এ্যাকশনে যাবে।
.
ঠিকানায় পৌছে কিছুটা অবাক হয় তারা। জায়গাটা খুবই অদ্ভুত। প্রচন্ড নির্জন। গাছগুলো শুষ্ক, পাতাঝরা, মৃত। যেন পরিকল্পিতভাবে সাজানো কোন এক মৃত্যুপুরি। কিছুটা দূরে একটা ছোট ঘরের মত। বাইরে থেকে দেখে তেমন কিছু বুঝা যাচ্ছে না।
হঠাৎ করে আতর্কিত গুলি বর্ষন হতে থাকে তাদের উপর। নিজেদের গাছের আড়াল করে পাল্টা গুলি ছুড়তে থাকে তারাও। তবে আকষ্মাৎ আক্রমনে তাদের কিছুটা ড্যামেজ হয়ে গেছে ততক্ষনে। কমান্ডার শেপার্ডের ডান থাইয়ে গুলি লাগে। বুলেট একপাশ ঘেষে মাংশপেশী ভেদ করে বেরিয়ে গেছে।তড়িঘড়ি করে প্রিজন ভ্যানে নেওয়া হয় তাকে। ততক্ষনে গোলাগুলিও কিছুটা থেমেছে।
.
'সাব ইউনিট -B' কমান্ডারের অর্ডার পেতেই আক্রমন শুরু করে। দুটো সাব ইউনিটই একসাথে আক্রমনে যায় এবার। এতে ভারি অস্ত্রশস্ত্রের সামনে শত্রুপক্ষ কিছুটা নড়বড়ে হয়ে যায়।গুলি করতে করতে সামনে এগুতে থাকে তারা।একসময় ওই ঘরটার সামনে চলে যায়।
দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকতেই যেন রিতীমত ধাক্কা খায় তারা। পুরো রুমটা ধবধবে সাদা টাইলসে মোড়ানো। অত্যাধুনিক সব যন্তপাতিতে রুমটা ঠাসা। এদিকে ওদিকে কম্পিউটার ছড়ানো ছিটানো। এছাড়া কম্পিউটারের মত অদ্ভুত একটা যন্ত্র। কিছু মোমের ট্রে এর উপর ছোট ছোট টুকরা করা মাথার অংশবিশেষ। খুব জঘন্য ভাবে কেটে  ফেলা হয়েছে মাথাগুলোকে। মগজগুলো এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
রুমের এক কোণে একটা রকিং চেয়ারে বসে কেউ একজন দুলছে। গায়ে ধবধবে সাদা লেব কোট। চোখে সেপটি গ্লাস, হাতে নীল রঙের হ্যান্ডগ্লাবস্।
তার চারপাশ ঘিরে গুলি তাক করে আছে CIA এর সব অফিসার। খানিক বাদে একটা হুইল চেয়ার করে রুমে ঢুকলেন কমান্ডার শেপার্ড।
ঢুকেই রকিং চেয়ারটার দিকে তাকিয়ে ভূত দেখার মত আৎকে উঠলেন কমান্ডার। অবিশ্বাসের কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন--
--গ্রিজম্যান? তুমি?
--হুম মাই ডিয়ার ফ্রেন্ড। আমি।
--এই সবগুলো খুন তুমি করিয়েছো?
--হুম আমি করিয়েছি।
কথাগুলো শুনে কমান্ডার প্রায় বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। কারন এই গ্রিজম্যান উনার খুবই ভালো বন্ধু।
পুরো নাম কার্লোস গ্রিজম্যান। পৃথিবীর সবচেয়ে তুখোড় নিউরোসাইনটিষ্ট।সে এত জঘন্য কাজ করতে পারে কমান্ডার শেপার্ড এটা ভাবতেও পারেন নি।কমান্ডার এই ধাক্কাটা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেন নি। খানিকটা তোতলাতে তোতলাতে কমান্ডার আবার জিজ্ঞেস করলেন--
--তুমি এত নিচে নামতে পারলে? কেন করলে তুমি এটা?
--বিকজ আই ওয়ানা বি গড।
--মানে?
--তুমি তো জানো নিউরোসাইন্টিস্টদের গবেষনার মূল বিষয় মস্তিষ্ক। আর এই পৃথিবীতে সবচেয়ে শক্তিশালি মস্তিষ্ক হলো মানবমস্তিষ্ক। আর আমার গবেষনার বিষয়ই হলো আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স। অর্থাৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। আমি মস্তিষ্কের নিউরনের আদলে একটা শক্তিশালী 'নিউরাল কম্পিউটার' বানাতে চাই।যেটি মস্তিষ্ক এবং কম্পিউটারের একটি মিলিত রুপ। যা দিয়ে আমি সমস্ত সৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রন করতে পারবো।ইউ নো, জাষ্ট লাইক গড।
--তাই বলে মানুষ খুন,কিডন্যাপ? একটা নবজাতক বাচ্চাকেও তুমি ছাড়লে না। তাকেও তোমার এই নোংরা গবেষনায় বলি দিতে হলো?
--নির্দিষ্ট বয়স পরপর মানব মস্তিষ্কের পরিবর্তন, পরিবর্ধন, অভিযোজন সবই আমার জানা প্রয়োজন। তাই করতে হলো।
--তুমি প্রচন্ড বোকা গ্রিজম্যান। তুমি একটি কম্পিউটার দিয়ে সমস্ত সৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রন করতে চাও? সৃষ্টিকর্তা মানুষকে সেই অধিকার দেন নি।
--তুমি বড্ড সেকেলে। এসব রিলিজিয়াস কথাবার্তা তোমার মুখে মানায় না।তুমি তো জানো আমি এসব ধর্ম-কর্মে বিশ্বাস করি না।
দেখো আইনস্টাইন তার মস্তিষ্কের মাত্র ১১% ব্যবহার করে পুরো পৃথিবী কাঁপিয়ে দিয়েছিল।আর নিউরাল কম্পিউটার তো তার থেকেও হাজার গুণ শক্তিশালী।সেটি দিয়ে পুরো সৃষ্টি নিয়ন্ত্রন করা খুবই কঠিন কিছু নয়। কিন্তু কাজ শেষ করার আগেই তো তুমি বাগড়া দিলে।
-- জানো তো অন্যের ক্ষতি করে কখনও সফল হওয়া যায় না।
কিন্তু তুমি তো ধর্ম, সৃষ্টি, সৃষ্টিকর্তা এসব বিশ্বাস করো না। তাহলে 'সৃষ্টিকর্তা' হতে চাও কেন? তার মতো সৃষ্টি, শক্তি এসবের নিয়ন্ত্রন নিতে চাও কেন?
তার মানে এটা নয় কি যে তুমি পরোক্ষভাবে সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করছো। আসলে তুমি খুব 'সুক্ষভাবে' ধর্ম, সৃষ্টিকর্তা এসবে বিশ্বাস করো। কিন্তু সেটা তুমি স্বীকার করতে চাও না। কিংবা তুমি নিজেই বুঝতে পারো নি।আর এখানেই তুমি ভুলটা করেছো।
আই ফিল সরি ফর ইউ, পুওর ম্যান।
.
কিছুক্ষন পর রুমের ভিতর থেকে 'খট-খট' করে বন্দুকের ব্যারল টানার আওয়াজ পাওয়া গেলো।আর সে সাথে সমাপ্ত হলে আরেকটি বিভৎস গল্পের।

No comments:

Post a Comment